ফিল্ম রিভিউ, বাংলা

ইরানি ছবি চিলড্রেন অব হ্যাভেন

প্রথম দৃশ্যেই ছবির গল্প স্পষ্ট। মানে পুরো ছবির কাহিনী যেটিকে কেন্দ্র করে তা প্রথম দৃশ্যেই উঠে এসেছে। এক্সট্রিম কোজ শটে দেখানো হয় একটি ছেঁড়া জুতো সেলাই হচ্ছে। একটু পর ধীরে ক্যামেরার ফ্রেম বাড়ে। দেখা যায়, একজন মুচি এবং তার সামনে দাঁড়ানো একটি ছেলে। এ ছেলেটির নাম আলী। আলী তার ছোটবোন জাহরার স্কুলের জুতা সেলাই করাতে এসেছে। সেই ছেঁড়া জুতোর অবস্থা দেখেই কিন্তু বলে দেয়া যায় একটি নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে আলী।

এই জুতো নিয়ে বাসায় যাওয়ার পথে একটি দুর্ঘটনা ঘটে যায়। আলী জুতোটা হারিয়ে ফেলে। তাও তার দোষে নয়। একটি ছোট সুপার শপ থেকে কাঁচাবাজার কেনার সময় আলী পলিথিনে মোড়ানো জুতোটা দোকানের বাইরে একটি বাক্সের সাইডে রাখে। ভেতরে গিয়ে আলু, টমেটো ইত্যাদি নিয়ে বাইরে এসে দেখে যেখানে জুতো রেখেছিল, তা আর নেই। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও জুতোর পলিথিনটা মেলে না। পাবে কোত্থেকে? সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী এসে সেই পলিথিনটাকে ফেলে দেয়ার জন্য রাখা জিনিস ভেবে নিয়ে যায়। এটা তো আর আলী দেখেনি। সে তখন দোকানের ভেতর কাঁচাবাজার নিয়ে ব্যস্ত।

শেষমেষ জাহরা-আলী সিদ্ধান্ত নেয় বিষয়টা বাবা-মার কাছে গোপন রাখবে। কারণ এ কথা বললে নতুন জুতো তো মিলবেই না বরং তারা শাস্তি পাবে। তারচেয়ে আসল কথা, তাদের বাবার পক্ষে এখন জুতো কিনে দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু জাহরা স্কুলে যাবে কীভাবে তাহলে? জাহরার স্কুল সকালে, আলীর দুপুরে। দুজনে মিলে ঠিক করে জাহরার স্কুলের পর যেহেতু আলীর স্কুল, জাহরা আলীর জুতো পরেই স্কুলে যাবে। জাহরা ফিরে এলে তারপর আলী সেটা পরবে। সমাধান একরকম হলেও এর জটিলতা কম নয়। কারণ জাহরার স্কুল ছুটির কিছুক্ষণ পরই শুরু আলীর স্কুল। জাহরাকে দৌড়ে পুরো পথ ফিরতে হয়। আলীও জুতো পায়ে গলিয়ে লাগায় দৌড়। তারপরও স্কুলে ঠিকমতো উপস্থিত হতে পারে না। কিন্তু বাধ্য হয়ে এভাবেই চালাতে হয়। পরপর দুদিন আলীর স্কুলের হেডমাস্টার ধরে ফেলে সে স্কুলে আসে দেরি করে। শাস্তি পেতে পেতে গিয়েও আলী দৈবক্রমে শেষাবধি বেঁচে যায়।

এর মধ্যে একটি সুযোগ আসে। জাতীয় স্কুল দৌড় প্রতিযোগীতায় অংশ নেয় আলী। সেখানে তৃতীয় পুরস্কার হিসেবে রয়েছে এক জোড়া জুতো। আলীর স্থির বিশ্বাস সে থার্ড হবেই। কিন্তু দৌড় তো দৌড়। সে সময় কি এত খেয়াল থাকে? দেখা যায় আলী প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে যায়। আর প্রথম ও দ্বিতীয় স্থান দখলকারীর পুরস্কার হিসেবে রয়েছে রাজধানীর বাইরে ক্যাম্প ট্যুর। আশাহত হয় আলী। ছোটবোনকে কথা দিয়ে এসেছিল থার্ড হয়ে সে জুতো জোড়া তাকে দেবে। তা আর হলো কই। অথচ ম্যারাথন দৌড় দিয়ে তাদের দুজনের একমাত্র জুতো জোড়ার অবস্থাও করুণ। আলী প্রথম হওয়ায় সাংবাদিকরা ফটাফট তার ছবি তুলতে থাকে, টিভি ক্যামেরা ভিডিও করতে থাকে। কিন্তু এসবে আলীর ফায়দা কী?
এই দুই ভাইবোনের আশাভঙ্গের কারণ দেখে দর্শকেরও প্রচণ্ড কষ্ট হয়।

কিন্তু ছবির শেষে এসে দর্শকের মুখে হাসি ফোটে। আমরা এই উপলব্ধিতে পৌঁছাই যে, সংগ্রাম করলে সফলতা আসবেই। আলী-জাহরার বাবা ছেলেমেয়েদের জন্য দুজোড়া জুতা কিনে আনেন।
মাজিদ। মাজদি ইরানে এবং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গনে প্রশংসিত নাম। ১৯৯৯ সালে মুক্তি পাওয়া চিলড্রের অব হ্যাভেন ছবিটি বিভিন্ন ফেস্টিভালে পুরস্কৃত হয় এবং সেরা বিদেশি ভাষার ছবি হিসেবে অস্কার প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়। কিন্তু সে বছর রবার্তো বেনিনির লাইফ ইজ বিউটিফুল ছবির কাছে এটি হেরে যায়। ছবিটিতে আলী-জাহরার চরিত্রে অভিনয় করেছে আমির ফারুক হাশমি ও বাহারে সিদ্দিকী।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *