ফিল্ম রিভিউ, বাংলা

লোমহর্ষক গল্পের ছবি পারফিউম

সতের শতকের ফ্রান্স। ছবির শুরু একটি মৃত্যুদ- কার্যকর করার ঘোষণা দিয়ে। এরপরই ফ্যাশব্যাক। একটি শিশুর জন্ম। একটি নোংরা মাছের বাজারে সেই জন্মের দৃশ্যটি দেখলে যে কারোরই শিউরে ওঠার কথা। যাহোক, এই শিশু সন্তান ওরফে গ্রেনুইলকে নিয়েই পুরো ছবি। জন ব্যাপটিস্ট গ্রেনুইল কিন্তু কোনো স্বাভাবিক শিশু নয়। তার সেন্স অব স্মেল অর্থাৎ ঘ্রাণশক্তি মারাত্মক। এ ঘ্রাণশক্তি এমনই যে দূর থেকেও সে যে কারো বা কিছুর অবস্থান বলে দিতে পারে।

একবার রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এক মেয়ের শরীরের সুগন্ধির প্রেমে পড়ে যায় সে। মেয়ের প্রেমে না, কেবল তার শরীরের সুরভীর প্রেমে। কিন্তু দুঃখজনক হলো দুর্ঘটনাবশত গ্রেনুইলের হাতে মেয়েটি নিশ্বাস আটকে মারা যায়। গ্রেনুইল নিজের চোখকে বিশ্বাস করাতে পারে না মেয়েটি প্রাণহীন! অথচ সে তো কেবল মেয়েটির চিৎকার থামাতে মুখ চেপে ধরেছিল। গ্রেনুইল এরপর পাগলের মতো মেয়েটির সারা শরীর থেকে সুগন্ধ শুষে নেয়। কেবল সুরভিই, অন্য কিছু না। এরপর সারাক্ষণ গ্রেনুইলের স্মৃতিজুড়ে থাকে সেই মেয়েটির সুরভি। শয়নে স্বপনে কিছুতেই সেই সুরভি সে ভুলতে পারে না।

গ্রেনুইল সিদ্ধান্ত নেয় সে সুগন্ধি সংরক্ষণ করা শিখবে। ফ্রান্সের শেষ্ঠ সুগন্ধি বা পারফিউম প্রস্তুতকারকের কাছে গ্রেনুইল কিছুদিন এ শিক্ষা নেয়। আর গ্রেনুইলকে সুগন্ধি নিয়ে শেখাবে এ সাধ্য কার? বরং গ্রেনুইলের কাছ থেকেই তার মাস্টার কিছু অনবদ্য সুরভি তৈরি করা শেখে। যাহোক, সেই মাস্টারের কাছ থেকে বেরিয়ে এসে গ্রেনুইল কিছুদিন এক গুহায় ধ্যান করে। এরপর শুরু হয় তার আসল কাজ সুগন্ধি সংরক্ষণ।

একে একে বারোটি মেয়েকে সে হত্যা করে। এবং এই বারোটি মেয়ের শরীরেই ছিল পাগল করা সুগন্ধ। গ্রেনুইল তার টেকনিক ব্যবহার করে প্রতিটি মেয়ের সুগন্ধি ব্যবহার করে তৈরি করে পৃথিবীর সেরা এক সুগন্ধি। এই সুগন্ধি হলো এমনই যা মর্ত্যরে মানুষ কখনো পরখ করেনি। মিশরীয় মিথে আছে, এক ফারাও রাজার কবর থেকে এমনই সুগন্ধ ভেসে আসত যে দুনিয়ার কোনো মানুষের সাধ্য নাই তা ভাষায় বর্ণনা করে। কিন্তু সেই সুরভি ছিল এগারটি গন্ধের সমন্বয়ে। আর মাত্র একটি গন্ধ যদি তাতে যোগ করা যায় তবে তা হবে স্বর্গীয়। যেহেতু পৃথিবীতে মৌলিক গন্ধই আছে বারোটি। গ্রেনুইল সেই অসম্ভবকেই সম্ভব করে। বারটি গন্ধের সমন্বয়ে সে তৈরি করে ফেলে সেই স্বর্গীয় সুরভি। অবশ্য এজন্য বারোটি তাজা প্রাণ নারীকে তার হত্যা করতে হয়।

আসল ঘটনাটা ঘটে ছবির শেষে এসে। গ্রেনুইলকে যখন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয় তখন। মরার আগে গ্রেনুইল তার জীবনের পুরো পরিশ্রম সেই ছোট্ট সুগন্ধির পাত্রটির মুখ খোলেÑ বারটি নারীর সুগন্ধি দিয়ে যা তৈরি। আর হাজার হাজার মানুষ যারা উন্মুক্ত ময়দানে গ্রেনুইলের মৃত্যুদ- কার্যকর দেখতে এসেছিল, যাদের চোখেমুখে গ্রেনুইলের প্রতি প্রচণ্ড ঘৃণা সবাই সেই সুগন্ধির গন্ধে মুহূর্তে পাগল হয়ে যায়। গ্রেনুইলের প্রতি তখন ঘৃণা প্রদর্শন তো দূরের কথা, সবার মুখে তখন একটাই কথা হি ইজ অ্যান অ্যাঞ্জেল অর্থাৎ সে একজন স্বর্গীয় দূত। দেখা যায় ময়দানের হাজার হাজার মানুষ গন্ধে উন্মত্ত হয়ে সেই খোলা মাঠেই যৌন ক্রিয়া শুরু করে, এমনকি পোপ বা বিশপ পর্যন্ত। শেষাবধি গ্রেনুইলকে ছেড়ে দেয়া হয়।
প্যাটরিক সাসকাইন্ডের উপন্যাস পারফিউম অবলম্বনে টম টাইকার নির্মাণ করেন এই চলচ্চিত্র। ছবিতে গ্রেনুইল চরিত্রে অভিনয় করেন বেন হইশো। ১৪৭ মিনিটের এই ছবিটি মুক্তি পায় ২০০৬ সালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *