জীবনে অনেক হলুদ দেখেছি আমি। রঙ্গিন, বিমর্ষ, সাদামাটা। শুভ্র হলুদ বকুলতলা, বসন্তের ম-ম করা রাঙ্গান হলুদ; কৈশোরের বেদনাময় ‘আজ আমেনার গায়ে হলুদ’ কিংবা ঢাকার এই কুঠুরিময় জঙ্গল জীবনের বসন্ত উদযাপন। কিন্তু হলুদ কোথায়? অনেক অনেক বছর আগে একবার খালার বাড়ি গিয়েছিলাম। আমার গ্রাম্য আটপৌরে সতিনের ঘর-করা খালা। বৃদ্ধ সোয়ামির মৃত্যুতে বছর ঘুরতেই যে অষ্টাদশী বিধবা। পাটা-পুতায় হলুদ বাটছিল খালা। আমার আসার সংবাদ শোনামাত্র দৌড়ে এসে আমার মুখখানি দুহাতে ধরে সে কি আদর। কেঁদেই ফেললেন, এত বছর পর আমারে দেখতে আইলি, বাজান? বেচারি খালা, মসলা-বাটা হাত ধুয়ে নেয়ার খেয়ালটাও ছিল না। কাঁচা হলুদে আমার মুখ তখন হলুদময়। হলুদের ঝাঁঝে চোখেও পানি টলমল। যৌবনে হলদে শাড়িতে শেফালি কতবারই তো দুহাতে আমার মুখ নিয়ে ওমনি আদর করেছে, চুমু খেয়েছে। কিন্তু কোথায় সেই গাঢ় হলুদমাখান নিখুঁত ভালবাসা? অনেক অনেক বছর পরে আবার খালাকে দেখতে গেলাম। খালা শুয়ে ছিলেন। চোখদুটো প্রায় গর্তে ঢুকে গেছে। পান খাওয়া মুখ। লালচে ঠোঁটের কোল ঘেঁষে জিহ্বাটা এলানো; ঠোঁটের সে কোণে পানের লোল পড়া একটি রেখা শুকিয়ে আছে। হা-করা মুখের ভিতর কাল কাল দাঁত। ও খালা, তোমার হলুদমাখান হাত দুটি কোথায় আজ? খালা শান্ত, চুপচাপ শুয়ে আছেন।
লন্ডন, ডিসেম্বের, ২০১১